হলুদকে ভারতীয় জাফ্রান বা সোনার মসলা বলা হয়। হলুদের বিজ্ঞানসমত নাম হলো Curcuma Longa । প্রায় ২৫০০ বছর ধরে হলুদের ববহার হয়ে চলেছে। হলুদের সর্বাধিক শক্তিশালী উপাদানগুলো হলো– Curcumin,Curcuminoids,Essential oil যা আপনার স্বাস্থ্যের প্রতিটি কার্যকলাপকে বাড়িয়ে তোলে। তা আপনার জয়েন্টের ব্যাথা সমূহ হোক কিংবা ডায়বেটিস এর চিকিৎসা হোক না কেন। কাঁচা হলুদকে রোগ নিরামকারী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।তাহলে আমাদের অবশ্যই জানা উচিৎ কাঁচা হলুদ কেন এত উপকারী–কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি–৬, ফাইবার, কপার, পটাসিয়াম ইতাদি উপাদান সমূহ। আমাদের দৈনদিন খাদ্য তালিকায় কাঁচা হলুদ রাখার ফলে এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করার আগে বিস্তারিতভাবে কাঁচা হলুদের উপকারীতা সম্পর্কে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার।
১. লিভার পরিশুদ্ধ করে।
২. টাইপ–২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫. হৃদ–যন্ত্রকে সুরক্ষা প্রদান করে।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি করে।
৭. বাতের ব্যাথা কমায়।
৮. সর্দি–কাশি নিরাময় করে।
৯. প্রাকৃতিক জীবাণুনাসক হিসেবে কাজ করে।
১০. Anti oxidants বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুন : কিভাবে স্থায়ীভাবে ফর্সা ত্বক
১. লিভার পরিশুদ্ধ করে হলুদ:
আমাদের দেহের একটি পুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার। হলুদের মধ্যে থাকা এন্টি–অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো যেকোনো ধরণের লিভারের রোগের চিকিৎসা করতে গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা Curcumin উপাদানটি লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। Curcumin মূলত এলকোহল যুক্ত ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদানগুলো যেকোনো ধরণের খাবার থেকে হওয়া সংক্রমণকে আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে লিভারের রোগ আমাদের ধারের কাছেও আসতে পারে না। এছাড়াও কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো লিভারের মধ্যে জমে থাকা টক্সিন পদার্থগুলোকে বের করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।ফলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।
২.ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে হলুদ:
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কাঁচা হলুদ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন সকাল বেলা যারা খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন তাদের দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যার প্রভাবে ডায়বেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন এর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই বলা যেতে পারে ডায়বেটিসের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে যদি না চান তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অবশ্যই কাঁচা হলুদ খেতে হবে। হলুদে থাকা Curcumin ডায়বেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।Curcumin রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে কম করার পাশাপাশি রক্তের মধ্যে উপস্থিত ফ্যাটির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। Curcumin অগ্ন্যাশয়ের বিটসেল কার্যকারীটাকে উন্নত করে। ইনসুলিন তৈরি করে যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুন :ত্বক ফর্সা হওয়ার কিছু তথ্য
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে হলুদ:
পেট এবং ত্বকের ক্যান্সারের মতো রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কাঁচা হলুদ। এর মধ্যে থাকা প্রতিরক্ষা মূলক উপাদানগুলো ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা কম করতে পারে এবং ক্যান্সারের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখেতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা দৈনিক কাঁচা হলুদ খাই তাদের বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে কাঁচা হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকা Curcumin যেকোনো প্রদাহের সাথে লড়াই করে শরীরকে প্রদাহ মুক্ত করে।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে হলুদ:
বর্তমান সময়ে দেহের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই সমস্যায় রয়েছেন।
তবে একটা সামান্য উপাদান দৈনন্দিন গ্রহণের ফলে আপনি আপনার ওজন কে নিয়ন্ত্রণে
রাখতে পারেন। কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা Anti obesity উপাদানগুলো শরীরে বাড়তি মেদ
জমাতে দেয় না এবং দেহের মেটাপলিজমের হার বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে শরীরের বাড়তি
মেদ জমার সম্ভবনা কমে যায়। হলুদের মধ্যে থাকা Curcumin উৎপাদনে বাড়ার সৃষ্টি করে
এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যথাযথ ডাইট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে
ওজন কম করার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় দৈনিক হলুদ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. হৃদ–যন্ত্রকে সুরক্ষা প্রদান করে হলুদ:
সারাবিশ্ব ব্যাপী প্রায় ৩১% মানুষ হৃদ রোগের কারণে মারা যায়। হলুদে থাকা Curcumin
রোগ প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদ রোগের মতোসমস্যাগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে কাঁচা হলুদ। এছাড়াও হলুদ দেহের কোলেস্টেরলেরমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আর নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে স্ট্রোকের সম্ভবনা অনেকটাইকমে যায়। এছাড়াও হলুদ আপনার হৃদ–যন্ত্রকে বিভিনম ক্ষতিকর
হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে খাদ্য তালিকায় কাঁচা হলুদ রাখার চেষ্টা
করুন।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি করে হলুদ:
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাই, তাদের ক্ষেত্রে হজমে সহায়ক পাঁচক রসের সমস্যা কমে যায়। সেই সাথে গ্যাস, এসিডিটির মতো সমস্যা কমতে থাকে। এছাড়াও কাঁচা হলুদ হজমের উন্নতি ঘটিয়ে প্রদাহ জনিত পেটের রোগ, লিভারের রোগ এবং ডায়রিয়ার সমস্যা সমাধান করতে পারে। এছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো গাস্টিক, আলসারের প্রভাব কম করতে পারে। তাই হজম ক্ষমতার উন্নতি করতে চাইলে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়া দরকার।
আরো পড়ুন :নার্ভের ভিটামিন কি
৭. বাতের ব্যাথা কমায় হলুদ:
যেকোনো ধরণের ব্যাথা কমাতে হলুদের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাতের ব্যাথা, হাঁটুর ব্যাথা, যেকোনো ধরণের পেশি ব্যাথার ক্ষেত্রে এই হলুদের ব্যবহার হয়ে থাকে। হলুদের মধ্যে থাকা Anti inflammatoty উপাদানগুলো শরীরের ভেতর থেকে ব্যাথা নিরাময়ে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে হলুদের মধ্যে থাকা Curcumin ও Curcuminoids যেকোনো ধরণের প্রদাহকে কম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও Arthritis ও হৃদ-যন্ত্রের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হলুদ রক্তে অক্সিজেন প্রেরণ করে যা শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে এবং শরীরে যেখানে যেখানে ব্যাথার সৃষ্টি হয় সেখানে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালনের ফলে রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে হয় এবং যেকোন ধরনের ব্যাথা বা ফুলে যাওয়া সমস্যাগুলোর সমাধান হয়।
৮. সর্দি–কাশি নিরাময় করে হলুদ:
৯. প্রাকৃতিক জীবাণুনাসক হিসেবে কাজ করে হলুদ:
হলুদের মধ্যে থাকা এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্যটি যেকোন ধরনের ব্যাক্টেরিয়াকে সহজেই ধ্বংস করে দিতে পারে।ত্বকের রোগের ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের মাধ্যমে পেতে যদি কোনো ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে সেক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খালি পেটে গুড় বা মধু দিয়ে খেলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। তাই নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়া দরকার।
১০. Anti oxidants বৃদ্ধি করে হলুদ:
হলুদ শরীরে anti oxidant বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে এনিমিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। মূলত মেয়েদের ক্ষেত্রে এনিমিয়া হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তাই মেয়েদের প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া হলুদ লোহিত রক্ত কণিকাকে রক্ষা করে এবং দেহের আয়রনের ঘাটতি মেটায়। এছাড়াও হলুদের মধ্যে থাকা এ্যান্টি–ইনফ্লেমেটোরি উপদানগুলো যেকোনো ধরনের মাসিকের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেয়। মাসিকের পূর্ববর্তী সময়ে ও মাসিক চলাকালীন সময় যে সমস্যাগুলো লক্ষ করা যায় সেগুলো কমাতে সহায়তা করে কাঁচা হলুদ।